মঙ্গলবার ৭ অক্টোবর ২০২৫ - ১৫:২৩
ইমাম খামেনি (রহ.)-এর প্রজ্ঞাময় দিকনির্দেশনা ও হিজবুল্লাহর নবজাগরণ

হিজবুল্লাহর সাধারণ শিক্ষা বিভাগের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির ইসরায়েলের গুপ্তচর হিসেবে ধরা পড়ার পর সংগঠনের নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ গভীরভাবে মর্মাহত হন।

হাওজা নিউজ এজেন্সি রিপোর্ট অনুযায়ী, হিজবুল্লাহর ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে একবার এমন একটি ঘটনা ঘটে যা সংগঠনের ভিত্তি ও নেতৃত্বের জন্য ছিল এক কঠিন পরীক্ষা। হিজবুল্লাহর সাধারণ শিক্ষা বিভাগের একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির ইসরায়েলের গুপ্তচর হিসেবে ধরা পড়ার পর সংগঠনের নেতা সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ গভীরভাবে মর্মাহত হন। ঘটনাটি শুধু একটি নিরাপত্তা সংকটই নয়, বরং এটি ছিল মনোবল ও আস্থারও এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ।

এই কঠিন মুহূর্তে নাসরুল্লাহ সাহেব হাজি কাসেম সোলাইমানিকে অনুরোধ করেন ইমাম খামেনি (রহ.)-এর কাছে বিষয়টি তুলে ধরার জন্য। পরে ইমাম খামেনি তাঁর কাছে এক গভীর প্রজ্ঞাময় বার্তা পাঠান, যা শুধু একটি সমস্যার সমাধানই নয়-বরং একটি আদর্শিক ও আধ্যাত্মিক পুনর্জাগরণের সূচনা হয়ে ওঠে।

ইমাম খামেনি তাঁর চিঠিতে চারটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন:

১. প্রথম দিকনির্দেশনা:
“এই আঘাতটি তোমার ওপর এসেছে, তোমাকে এটিকে সহ্য করতে হবে।”
অর্থাৎ, একজন নেতার জন্য এ ধরনের ধাক্কা নেতৃত্বের অংশ। এই আঘাত সহ্য করে দৃঢ় থাকতে হবে, কারণ নেতৃত্ব মানেই চ্যালেঞ্জের মুখে অটল থাকা।

২. দ্বিতীয় দিকনির্দেশনা:
চিন্তা করো না, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সময়েও এমন ঘটনা ঘটেছিল।
ইমাম খামেনি এভাবে নাসরুল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, এমন বিশ্বাসঘাতকতা ও অনুপ্রবেশ কোনো নতুন বিষয় নয়। ইতিহাসে নবীজির যুগেও এমন পরীক্ষা এসেছিল, আর সেসব অতিক্রম করেই ইসলামী সমাজ পরিণত হয়েছে।

৩. তৃতীয় দিকনির্দেশনা:
প্রিয় নাসরুল্লাহ, ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে, সেজন্য আরো সতর্ক থাকতে হবে।
এখানে ইমাম বাস্তবিক ও কৌশলগত নির্দেশনা দেন-সংগঠনকে নিরাপত্তা ও তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আরও সজাগ ও সুসংগঠিত হতে হবে।

৪. চতুর্থ দিকনির্দেশনা:
বাসিরতের (অন্তর্দৃষ্টি ও সচেতনতার) জন্য দোয়ার আয়োজন করো।
এই নির্দেশনাই হিজবুল্লাহর ভেতরে এক নতুন ধারা সৃষ্টি করে। কারণ ইমাম খামেনি বুঝিয়ে দেন, শুধুমাত্র বাহ্যিক সতর্কতাই যথেষ্ট নয়-আত্মিক জাগরণ ও আধ্যাত্মিক সচেতনতাও অপরিহার্য।

এই নির্দেশনার ফলেই হিজবুল্লাহ প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের অভ্যন্তরীণ তথ্য-নিরাপত্তা বিভাগ (হেফাজতে-ইত্তেলাআত)। শহীদ শেখ নাবিল কাওককে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। পাশাপাশি, সংগঠনের প্রতিটি সদস্যের জন্য “দোয়া-এ বসিরত” (সচেতনতার প্রার্থনা) পাঠ বাধ্যতামূলক করা হয়।

পরবর্তীতে, যখন হিজবুল্লাহর সদস্যরা ইমাম রেজা (আ.)-এর জিয়ারতে যেতেন, তারা আলেমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং এই দোয়াগুলিতে গভীর মনোযোগ দিতেন। এমনকি বড় বড় শহীদ কমান্ডাররাও-যেমন হাজি আবুল ফজল, আলী কারাকি প্রমুখ-নিজ হাতে এই দোয়াগুলি পাঠ করতেন। সবাই একবাক্যে বলতেন, “এটি সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহর নির্দেশ; এটি বাধ্যতামূলক।”

এইভাবেই, এক সংকটের মুহূর্তে ইমাম খামেনির প্রজ্ঞা হিজবুল্লাহকে শুধু রক্ষা করেনি-বরং তাদের আত্মিকভাবে নবজাগরিত করেছে। “দোয়া-এ বসিরত” হয়ে ওঠে তাদের নৈতিক শক্তি ও আধ্যাত্মিক প্রতিরক্ষার প্রতীক।

ইমাম খামেনি (রহ.)-এর এই চার দিকনির্দেশনা শুধু একটি সংগঠনের জন্য নয়, বরং নেতৃত্ব ও ইসলামী চেতনার জন্য এক অনন্ত শিক্ষা। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন-সংকট আসলে পতনের নয়, বরং আত্মসমালোচনা ও বিকাশের সুযোগ। হিজবুল্লাহর ইতিহাসে এই ঘটনাটি তাই এক “বাসিরতের বিপ্লব”-যা আজও প্রতিটি মুমিন যোদ্ধার হৃদয়ে জ্বালিয়ে রাখে সচেতনতার প্রদীপ।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha